ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা, সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত উদ্যোগ

ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা, সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত উদ্যোগ

  • September 25, 2023
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা, সমস্যা সমাধানে সম্মিলিত উদ্যোগ


গ্রামীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, পুষ্টিসেবা, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যশিক্ষা, ও সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা/ পরামর্শ প্রদান করার ক্ষেত্রে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই কেন্দ্রের সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনায় স্থানীয় বাসিন্দা, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে নারীদের সম্পৃক্ত করা হলে উল্লেখিত সেবাসমূহ প্রদান করা সহজ হবে। এতে করে এ কেন্দ্রের ও সেবাদানকারীর সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। তাই প্রতিটি কেন্দ্র সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রতিনিধি বিশেষ করে নারী সদস্যদের নিয়ে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। উক্ত কমিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালনা, সেবার মানোন্নয়ন এবং নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত সভা, সচেতনতামূলক কর্মসূচি আয়োজন করে। জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালনা কমিটিকে সক্রিয় করার জন্য এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা  জবাবদিহিতা তৈরির জন্য  কাজ করছে।

এরই ধারাবাহিকতায় ২৫ শে সেপ্টেম্বর ২০২৩ কান্দিউড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে বাংলাদেশ হেল্থ ওয়াচ এর উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম এবং উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরামের কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যবস্থাপনা কমিটির নিয়মিত সভা, ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবার মানোন্নয়ন করণীয় কী এ উদ্দেশ্যে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভার মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা যেমন, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়মিত খোলা, বৈদ্যুতিক সমস্যা,ঔষধ স্বল্পতা হয়না, গর্ভবতী নারীদের এএনসি নিয়মিত হয়না এবং সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সেবা গ্রহণের আগ্রহ কম ইত্যাদি।

উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. রহিছ উদ্দিন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, আমরা কয়েকজন উপজেরা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম এবং স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরাম স্বেচ্ছায় আমাদের কাছাকাছি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর সেবার মানোন্নয়ন করার জন্য কাজ করছি। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র আমাদের পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাজ করছে। এ প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়নের সাথে এই এলাকার দরিদ্র জনগোষ্টীর স্বাস্থ্যসেবা অনেকাংশে নির্ভরশীল। নবজাতক, শিশু, কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যসেবা, পুষ্টিসেবাসহ সাধারণ রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য এ কেন্দ্রসমূহে স্থানীয় নেতৃত্ব, জনপ্রতিনিধি, গন্যমান্য ব্যক্তি ও নারীদের সম্পৃক্ত করার জন্য ১৭ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি আছে। এর মাধ্যমে, এই কেন্দ্রের মানোন্নয়নের জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা, অংশগ্রহণ এবং দায়দায়িত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এই কমিটির নিয়মিত সভা হলে এই কেন্দ্রের আনেক সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব কর্তব্য ও কার্যাবলী নিয়ে ধারণাপত্র পাঠ করেন উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাখাল বিশ্বাস। অত:পর কমিটির কার্যক্রম ও দায়িত্ববিষয়ক মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

মুক্ত আলোচনা:
আবুল কাশেম, ইউপি সদস্য ও সদস্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটি :  তিনি বলেন আমি উক্ত কমিটির সদস্য তা  আমি জানি না, আজকে জানলাম। এই কেন্দ্রে সপ্তাহে ১ দিন ঔষধ দেয় বাকি পাঁচ দিন বলে ঔষধ নাই। তিনি আশা করেন কমিটির সভা যাতে নিয়মিত করা হয় এবং সবাই সবার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করেন। গর্ভবতী মহিলাদের সেবা আছে কিন্তু সে সেবা সঠিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে না। এই বিষয়গুলোর জবাবদিহিতা না থাকার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। ঔষধের জন্য আসলে বলে ঔষধ নাই। 
জান্নাত আরা,  পরিবার কল্যাণ সহকারী :  তিনি বলেন,এই কেন্দ্রে সেকমো নেই, প্রত্যেকদিন অনেক রোগী আসে । কিন্তু  অনেকেই অপয়োজনে ঔষধ নিতে চায় এরফলে প্রয়োজনে আনেকেই ঔষধ পায়না।  প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির জন্য জনগনের আগ্রহ কম। এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২টি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। গর্ভবতী নারীদের সেবা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়।
চায়না আক্তার, সি এইচ সিপি:  তিনি জানেন না তিনি ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য। এফ ডাব্লিউ ভি  ফারহানা ইয়াসমিন রুপা  সাত মাস যাবৎ এসেছে কিন্তু কোন মিটিং হয়নি।
নুরন্নাহার, স্বাস্থ্য সহকারী :  আগে মিটিং হতো এখন হয় না। এক বছর যাবৎ মিটিং হয় না। 
মাহমুদা আক্তার, সদস্য, কিশোরী : আমি জানতাম না আমি এই কমিটির সদস্য। আজ প্রথম জেনেছি।
শামীমা আক্তার , রোগী, গর্ভবতী:  কেন্দ্রে সেবা নিতে আসি, মাঝে মধ্যে নুরুন্নাহার আপা বাড়িতে গিয়ে সেবা দেয়, উক্ত কেন্দ্রের সেবা বিষয়ে আমি সন্তুষ্ট ।

সামিয়া আক্তার, সহকারী শিক্ষক, সদস্য ব্যবস্থাপনা কমিটি: এখন থেকে মিটিং যেন নিয়মিত করা হয়। ইউনিয়নের মানুষেরা যেন নিয়মিত সেবা পায়। সেবা দেওয়ার কথা যেখানে সেখানে অনেক জবাবহিতা এবং সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সভা যদি নিয়মিত করা হয় তাহলে সঠিক তথ্য জানা যাবে এবং ঔষধ জনগন কেন পাচ্ছে না কেন দেওয়া হচ্ছে না তাও জানা যাবে। 
আরিফুজ্জামান আরিফ, সভাপতি, যুব ফোরাম, উপজেলা কমিটি : চারদিন স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শন করতে আসি, দুদিন স্বাস্থ্য কেন্দ্র খোলা পাই।  এভাবে কেন্দ্র বন্ধ থাকলে জনগণ কিভাবে সেবা পাবে? 
রাখাল বিশ্বাস, সাধারন সম্পাদক, উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম:  আমরা  সকলেই  প্রসংশা পেতে  চাই কিন্তু দুর্বলতা গুলো দেখি না। স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উঠার যে রাস্তা তা অপরিষ্কার, চলাচলের উপযোগী না। কমিটি পুন:গঠন করে নিয়মিত সভা করা হলে সমস্যা অনেক কমে আসবে। এফ ডাব্লিউ ভি বাড়িতে গিয়ে সেবা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। আমরা আজকে সিদ্ধান্ত নিব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাবার রাস্তা মেরামত কবে করব।
রুপা আক্তার এফ ডাব্লিউ ভি : আমি দুটি দায়িত্বে আছি। আমার কাজের ফাঁক থাকতে পারে। এখন থেকে নিয়মিত সভা করা হবে। আপনাদের মাধ্যমে সেকমো নিয়োগ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। গর্ভবতীদের সঠিক সেবা দিতে পারি না। প্রসুতি সেবা দিতে পারি না। সারাদিন সাধারণ রোগী দেখতে হয়। জনগণের তুলনায় ঔষধ অনেক কম আসে।


সমস্যাসমূহ সম্পর্কে আলোচনার করে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ প্রহণ করা হয়; 
- আগামী সভার পূর্বেই কমিটি পুন:গঠন  করা হবে।
- রাস্তা মেরামত করবে ইউপি সদস্য আবুল কাশেম, যুব ফোরাম ও  ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র।
- প্রতি দু’মাস পরপর ব্যবস্থাপনা কমিটির মিটিং করা হবে।  
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন রাবিয়া আক্তার, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, সহ সভাপতি কান্দিউড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র । এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, সাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির প্রকল্প ব্যবস্থাপক কোহিনূর বেগম ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যবৃন্দ,স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম এর সভাপতি মো: রহিছ উদ্দিন মাস্টার,সহসভাপতি কানিজ সুলতানা মিতু এবং সাধারন সম্পাদক রাখাল বিশ্বাস, উপজেলা যুব ফোরামের সমন্বয়ক মো: আরিফুজ্জামান আরিফ ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। 
প্রতিবেদক: ঝর্ণা জাহান, জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম, নেত্রকোনা। স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতি, নেত্রকোণা

Citizen's Voice