বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং জাবারাং কল্যাণ সমিতির সহযোগিতায় মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম কর্তৃক মহালছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি মো. শাহাজাহান পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতনিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিমল কান্তি চাকমা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দীন, মহালছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল। এছাড়া, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহŸায়ক ড. আহমেদ মোস্তাক রাজা চৌধুরী, উপদেষ্টা ড. ইয়াসমিন আহমেদ, কার্যকর কমিটির সদস্য মো. ফারুক আহম্মেদ, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর শেখ মাসুদুল আলম, প্রোগ্রাম কো অর্ডিনেটর আসমা আক্তার, এবং রাজেশ কুমার অধিকারী উপস্থিত ছিলেন। মহালছড়ি উপজেরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে জনগণের প্রত্যাশা জানা এবং স্বানীয় সমাধানের জন্য জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে একদিকে সেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সেবা, সেবার ধরন, সবলতা, সীমাবদ্ধতা তথা প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা জনগণের সামনে তুলে ধরেন। আবার এলাকার জনগণ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের সমস্যা, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কথা জানাতে পারেন। ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিবেশ তৈরি হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে সেবার মানোন্নয়নের জন্য জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্র তৈরি করে।
এই কর্মসূচি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ এবং এলাকার জনগণ বা সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে পারস্পরিক ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক তৈরিতে অবদান রাখবে। এর মাধ্যমে সেবাদাতাগণ নিজেদেরকে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য এবং জবাবদিহি করার সুযোগ পায়। প্রধান অতিথি বলেন, সরকার সারাদেশের ন্যায় মহালছড়ি উপজেলায়ও স্বাস্থ্যখাতে সার্বিক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে। পূর্বের তুলনায় এখন পথঘাটসহ যোগাযোগ অবকাঠামোর অনেক উন্নতি হলেও মহালছড়ি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার মান এখনো আশানুরুপ উন্নতি হয়নি। তিনি উপজেলার স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে পার্বত্য জেলা পরিষদসহ সদাশয় কর্তৃপক্ষের নিকট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের চব্বিশ ঘন্টা অবস্থানের সুবিধার্থে জেলা পরিষদ কর্তৃক নিবিড় তদারকি, ডাক্তারদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনসহ উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আহবান জানান। সরকারি- বেসরকারি সকল পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উপজেলা স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়ন সম্ভব বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারীভাবেও মহালছড়িতে একটি ডায়াগনস্টিকসেন্টার গড়ে তোলা জরুরী, যাতে এখানকার রোগীদেরকে খাগড়াছড়ি শহরের উপর নির্ভরশীল হতে না হয়। মহালছড়ি উপজেলার সকল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হলে সরকারি-বেসরকারি সকলের সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
স্বাগত বক্তব্যে সাধন কুমার চাকমা বলেন, নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতালের শুন্যপদ পুরণে অতি দ্রুত জনবল নিয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে সেবাদানকারীর উপস্থিতি আগে নিশ্চিত করা প্রয়োজন, তারপর সেবাগ্রহনকারীদের ১০০% হাসপাতালমুখী করার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম, উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনে মানববন্ধন, পোষ্টারিং, মাইকিং ও পথনাটকসহ যে কোন কর্মসুচি গ্রহণ করবে। অন্যান্য বক্তারা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিকার, স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে জনসচেতনতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি এবং সকল পর্য়ায়ে জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করে স্বাস্থ্যসেবায় টেকসই উন্নয়নে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য অধিকা ফোরামের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে। বক্তারা সেবাপ্রদানকারী ও সেবাগ্রহণকারী উভয়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই সমস্যাগুলো সমাধান করার আহ্বান জানান। সভায় মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা. ইফতেখার আহমেদ তাঁর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার সুযোগ সুবিধাসহ কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও সাধারণ জনগনের কাছ থেকে ইতিবাচক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান এবং স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে নিম্ন লিখিত সুপারিশগুলো উঠে আসে;
১. স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সকল প্রকার প্যাথলজি সেবা নিশ্চিত করা;
২. প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাসপাতালে আসার জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা;
৩. হাসপাতালের ঔষধ সরবরাহ বৃদ্ধি করা, ভালো কোম্পানী থেকে ঔষধ ক্রয় নিশ্চিত করা;
৪. দুস্থ রোগীদের জন্য সমাজসেবার সহযোগিতা নিশ্চিত করা;
৫. ইমার্জেন্সিতে সার্বক্ষনিক ডাক্তার নিশ্চিত করা, ইমার্জেন্সি রুমের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা;
৬. হাসপাতালে সময়মতো এবং নিয়মিত ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা;
৭. নিয়মিত গর্ভকালীন ও প্রসূতি সেবা নিশ্চিত করা;
৮. কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবা নিয়মিত করা, প্রয়োজনীয় তদারকি করা এবং সিজি গ্রুপকে সক্রিয় করা।
Citizen's Voice