১২ আগষ্ট ২০২৩ বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ-এর সহযোগিতায় রূপান্তর ও জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত “স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ও আমাদের করণীয় শীর্ষক হাসপাতাল অংশীজনের সভা” অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি এ্যাড. মো: শাহ আলম টুকুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাঃ খালিদ হোসেন, মাননীয় জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, বাগেরহাট। বিশেষ অতিথি রফিকুল ইসলাম খোকন, নিবার্হী পরিচালক- রূপান্তর, ডা. হাবিবুর রহমান, ডেপুটি সিভিল সার্জন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, অপরাজিতা এ্যাড. শরিফা হেমায়েত, চেয়ারম্যান- জাতীয় মহিলা সংস্থা, নিহার রঞ্জন সাহা, সভাপতি- বাগেরহাট প্রেসক্লাব, ডাঃ অসীম কুমার সমাদ্দার, তত্ত্বাবধায়ক- হাসপাতাল।
স্বাগত বক্তব্যে জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের সভাপতি এ্যাড. মো. শাহ আলম টুকু উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, সাংবাদিক, সেবিকা, সেবাগ্রহীতা সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, হেলথ ওয়াচ এর অনুপ্রেরণায় গঠিত জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম মূলত স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সেবার মানোন্নয়নে সহযোগি হিসেবে কাজ করছে। আমরা জেলা হাসপাতালকে আরো সেবামুখি করে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এন্টিবায়োটিক চালু হয়েছিল ১৯৮০ সালে। এটি আমরা গ্রহন করলে তাৎক্ষিনিক ফল পায়। গবেষনায় দেখা গেছে ২০৫০ সালের মধ্যে এন্টিবায়োটিক এর কারণে ১০ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হতে পারে। যত্রতত্র, উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত এন্টিবায়োটিক গ্রহন করা যাবে না। এব্যাপারে রোগী এবং চিকিৎসকদের আরো সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সদর হাসপাতালে ৫৮টি পদ কিন্তু সব পদে ডাক্তার নাই। হাসপাতালে অনেক মেশিন নষ্ট, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, পানীয় জলের ব্যবস্থা অপ্রতুল। জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদ পুরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। টিকিটের সময় র্দীঘ লাইনের সৃষ্টি হয়। ফলে নারী, প্রতিবন্ধীদের সেবাগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি নারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা টিকিট কাউন্টারের প্রস্তাব করেন। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং রোগীদের জন্য মশারির ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। সরকার উতোমধ্যে ১৮৩ টি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা সেবার আওতায় এনেছে, বাগেরহাট সদর হাসপাতালে কিধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেব্যাপারে বিস্তারিত জানানোর জন্য তত্ত্বাবধায়কের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম-র লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম ও প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করেন রিজিয়া পারভীন, সহ-সভাপতি জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম। তিনি সকলকে শুভেচ্ছা ও, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই সার্বিক আয়োজনে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ অসীম কুমার সমাদ্দার। তাকে ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এবং একই সাথে আজকের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন। আমাদের আজকের অনুষ্ঠানকে সার্থক করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা, সংবাদকর্মী, ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সেবাগ্রহিতা, স্থানীয় এনজিও প্রতিনিধি, রোগি কল্যান সমিতি, জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম, জেলা স্বাস্থ্য যুব অধিকার ফোরাম, মা ও শিশু কল্যাণ, বিএমএ, স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরাম, সংশ্লিষ্ঠ ওয়ার্ড কাউন্সিলার, পুষ্টি উন্নয়নে নাগরিক কমিটি, টিআইবি, সনাক, নাসিং ইনস্ট্রেটিং, ম্যাক্রাস, অপরাজিতা নেটওয়ার্ক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এখানে উপস্থিত আছে। কিভাবে স্বাস্থ্য সেবা জনগণের দোরগোড়ায় ১০০% নিয়ে যাওয়া যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম সহযোগি হিসেবে কাজ করছে। আমরা সেবা দাতা ও সেবা গ্রহিতাদের মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টির কার করছি। সেতুবন্ধনের মধ্যদিয়ে এখানকার স্বাস্থ্যসেবার মান গুণগত মানবৃদ্ধি পাবে। সাধারণত সেবাগ্রহিতা সবসময় তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেনা, আমরা কথা বলার জন্য একটা উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে অনুঘটকের ভ‚মিকা পালন করছি। এবং আমরা আশা করি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই প্লাটফর্ম এবং হাসপাতালের দায়িত্বরতদের সাথে নিয়ে একটি ২ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করতে পারেন, যাদের কাছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ বা সেবাগ্রহিতা তাদের সমস্যার কথা নির্দ্বিতায় বলতে পারে। তিনি বলেন আমাদের বড় সমস্যা লিফটের গুনগত মান ভালো না, এই সমস্যা দ্রæত সমাধান করতে হবে। হাসপাতালে র্যাম না থাকার কারণে অনেক সময় রোগিকে কাধে করে ৫তলা, ৬তলা বহন করা খুবই কষ্টকর।
বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এর প্রতিনিধি রাজেশ অধিকারী বলেন, হাসপাতালে যারা যারা অংশীজন তাদের সকলে মতামত, তারা কিভাবে দেখেন হাসপাতালটাকে, কিভাবে হাসপাতাল মানোন্নয়নের সম্ভারনাটাকে দেখেন তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা এবং কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায় সেটাই আজকের আয়োজেনের মূল লক্ষ্য। তিনি বলেন, আজকের আয়োজন আমার কাছে খুবই অনুপ্রেরনার। বাগেরহাট জেলার সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত হয়েছেন। আমি বিশ^াস করি হাসপাতালের সমস্যা সমাধানের জন্য মাসে একবার এই মানুষগুলো যদি একত্রিত হতে পারে তাহলে প্রতিষ্ঠানের ভালো হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। এই আয়োজনটি করবার জন্য বাংলাদেশ হেল্থ ওয়াচের অনুপ্রেরনায় গঠিত জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের নেতৃবৃন্দ ও কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমরা জানি ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা টেকসই উন্নয়নের একটি অন্যতম লক্ষ্য। আমাদের যদি এই অভীষ্ট অর্জন করতে হয়, তাহলে সত্যিই এই রকম আয়োজনের প্রয়োজন আছে। এটি সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়, সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ পৃথিবী অন্যতম দেশ, যেদেশে স্বাস্থ্য তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের মার্তৃ মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যু হার, আমাদের যে গড় আয়ু উল্লেখ যোগ্য পর্যায় পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। এই অর্জন শুধু হয়েছে আপনাদের কাজের ফলে যারা স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত কিন্তু আমাদের সামনে অনেক পথ বাকি আছে। যারা সামনে বসে আছেন তারাই আজকে মূল বক্তা তাদের কাছ থেকে শোনা। সেবা নিতে গিয়ে তাদের কী ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছে, কী সমস্যা আছে ইত্যাদি। উপস্থিত কর্তৃপক্ষ সেবাগ্রহীতাতের কথা শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন এটাই াামাদের প্রত্যাশা।
স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে আমরা কী করতে পারি এ বিষয়ে
মুক্ত আলোচনা : আমাদের হাসপাতালে সেবা বিষয়, সেবারমান বিষয়, সেবাগ্রহিতার দায়িত্ব-কর্তব্য বিষয়, স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়তিদের আচার-আচারণ বিষয়, বিনামূল্যে সরবারহ করা ঔষধ বিষয়, ডাক্তাদের সময়মত উপস্থিতি বিষয়, ভর্তি রোগিদের খাবার ও পরিবেশন বিষয়, হাসপাতালের জনবল বিষয়, হাসপাতালের অফিস সময় নতুন যে নীতিমালা হয়েছে সে বিষয়, পানি ব্যবস্থাপনা, র্যাম, সিটিস্ক্যান, এমআরআই বিষয়ে মুক্ত আলোচনা।
আহাদ উদ্দিন হায়দার, সাধারণ সম্পাদক- বাগেরহাট ফাউন্ডেশন, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন ২৫০ শয্যা হাসপাতাল এখনো ১০০ শয্যার লোকবল দিয়ে চলছে। লোকবল বাড়ানোর প্রস্তাব করছি। এছাড়াও পানির ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা, টয়লেট, বেসিন নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চত করা, ওয়ার্ডে চুরি বন্ধের জন্য কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সাজ্জাদ হোসেন, সভাপতি- রোগি কল্যাণ সমিতি, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন ২ জন ডাক্তার পেয়েছি ডা. ফারুকুজ্জামান ও ডা. জব্বার ফারুকী এদের সুনাম না বলে পারছিনা। যারা রোগির সাথে গল্প করতে করতে অপারেশন করছে, রোগিরা টেরও পাচ্ছে না। নার্সদের ব্যবহার সুন্দর কিন্তু ৫/৬ জন এর ব্যবহার ভালো না। তিনি ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
রাতুল শীল, সদস্য- জেলা স্বাস্থ্য অধিকার যুব ফোরাম, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন টিকিট কাউন্টারে গর্ভবর্তী মহিলাদের অনেক সময় দাড়িয়ে থাকতে হয়, এতে করে মায়েদের অনেক কষ্ট হয়। এরজন্য দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহŸান জানান।
শিরিনা আক্তার, সেবা গ্রহিতা, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন আমি আমার বাবাকে নিয়ে এই হাসপাতালে ১৫/২০দিন ছিলাম। আমাদের এই হাসপাতালের সেবারমান খুব ভালো। তবে রক্ত পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এই পরিক্ষার জন্য আরএমও স্যারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়। আরএমও স্যার যদি ঐসময় হাসপাতালে না থাকে তাহলে পরীক্ষা করা সম্ভাব হয় না। রক্ত পরীক্ষাসহ সকল পরীক্ষা নীরিক্ষা আরো সহজ করার দাবি জানান।
এস এম শামসুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আরটিভি প্রতিনিধি, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন দুঃখজনক হলো হাসপাতালে মেশিন থাকার পরও টেস্ট করার জন্য বাইরে পাঠানো হচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। আর চোখের ডাক্তার নেই, আর নাসিং মেটাস্ এর ছাত্র-ছাত্রীরা অপ্রয়োজনে অনেক ঔষধ নেয়।
প্রবীর রায়, সমাজ সেবা অফিসার, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন দুঃস্থ রোগীদের সহায়তার জন্য ৯ লক্ষ টাকা পেয়েছি তার ভিতর ৯০ হাজার টাকা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যয় করা হবে।
রামকৃষ্ণ বসু, সভাপতি, টিআইবি, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন অধিকারের সাথে দায়িত্ব সম্পৃক্ত। যার আগে সেবা প্রয়োজন তাকে আগে সেবা দিতে হবে। তিনি আরও বলেন আমাদের হাসপাতালে আসার যে মেইন রাস্তা তার বেহাল দশা, আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট আহŸান করছি এই রাস্তাটা ভালো করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহন করবেন।
এ্যাড. লুনা সিদ্দিকী, সভাপতি, যুব মহিলালীগ বাগেরহাট জেলা, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন হাসপাতালে জনবল ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী খুব প্রয়োজন। জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, খারদার বিভিন্ন রাস্তার পাশে পানি জমে ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য ঝুকিপূর্ণ হতে পারে।
নার্সিং সুপারভাইজার বলেন নার্স সংকট আছে, নার্স বাড়ানো প্রস্তাব করছি। বিভিন্ন কর্মসূচিতে নার্সিং ইন্সটিটিউট কে সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
ডাঃ জয়নুল আদনান রুমেল, আরএমও, সদর হাসপাতাল। তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি বলেন আমি খুব আনন্দিত। আমাদের অনেক জনবল সংকট। জনবল সংকট দুর করতে পারি তাহলে আমরা কাংখিত লক্ষ্যে পৌচ্ছাতে পারি। সমাজ সচেতন হলে রোগির সংখ্য কমে যাবে। চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায় জনসচেতন কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
ডা. ডালিয়া হালদার, সিনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী ও অবস) তিনি বলেন আমি সিনিয়ন কনসালটেন্ট, আমাদের জুনিয়র কনসালটেন্ট পোষ্ট খালি। জনবল যদি তিন বেলা থাকতো তাহলে রোগি বাইরে যেতে হবে না। বিপদে পড়লে আমাদের পক্ষে কেউ এগিয়ে আসে না। আমরা কি করে ভালো সেবা দিবো। অনেক রোগির লোকরা কোন সমস্যার কথা শুনতে চায় না। আমাদের অনেক সমস্যা পড়তে হয়। আপনাদের কাছে প্লিজ কিছু সিদ্ধান্ত আমাদের উপর ছেড়ে দিবেন। তো আমার কথায় কেউ কষ্ট পাবেন না,
বিশেষ অতিথি এ্যাড. শরিফা খানম, চেয়ারম্যান, জাতীয় মহিলা সংস্থা বাগেরহাট জেলা, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন দুই,এক জনের জন্য সবাইকে খারাপ বলা যাবে না। সকল একই হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি সেবাপ্রদানকারীরা যেন নিয়মিত এবং সময়মতো হাসপাতালে উপস্থি থাকেন এবং সেবা দেন সেজন্য কর্তপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশেষ অতিথি নিহার রঞ্জন সাহা, সভাপতি, বাগেরহাট প্রেসক্লাব, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন মাত্র নির্মাণ হওয়া বিল্ডিং এর টাইলস, প্লাস্টার খসে খেসে পরে যাচ্ছে। এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে সমস্যা আছে। হাসপাতালে চুরি ঠেকানোর জন্য সিসি ক্যামেরা দেওয়ার জন্য সুপারিশ করছি।
বিশেষ অতিথি রফিকুল ইসলাম খোকন, নির্বাহী পরিচালক, রূপান্তর, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন স্বাস্থ্যসেবার মানোয়ন্ননের জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এটি একটি মিনি সংসদ যেখানে নিজেরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছি, সমাধানের পথ খুঁজে বের করছি। আগামীতে স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম এবং কর্তৃপক্ষ যেন নিয়মিত এধরণের আয়োজন অব্যাহত রাখে।
বিশেষ অতিথি জনাব ডাঃ মুহাম্মাদ হোসাইন শাফায়াত, সহকারী পরিচালক, ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন ১২ ওয়ার্ডে ৪৮জন জনবল প্রয়োজন কিন্তু আছে কতজন। ৫৮টি পোষ্টের মধ্যে ১৬টি পোষ্টে নার্স রয়েছে। জনবল সংকট থাকায় প্রত্যাশামতো সেবা দেয় সম্ভব হয়না। সেইজন্য এই সমস্যা দুর করার জন্য বেশিবেশি সংলাপ করতে হবে। এরপর তিনি বলেন আমাদের চুরি নিয়ন্তণের জন্য আমরা আনসার নিয়োগ দিতে পারি। আবার চুরি যারা করছে তারা বেশি সংখ্যক নয়। এদের আমরা সকলে মিলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
বিশেষ অতিথি জনাব ডাঃ হাবিবুর রহমান, ডিপুটি সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বাগেরহাট, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন আমরা সকলে সমস্যা এবং সমাধানের উপায় কথা বলছি। আজ অনেক সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। আমাদের রোগী এবং ডাক্তারদের মধ্যে সমস্যা থাকবে না, যদি আমরা পারস্পরিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারি। সকলে মিলে কাজ করতে হবে। আমি স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামকে ধন্যবাদ জানাই, তাদের এই মহৎ উদ্যোগেকে। এধরনের বসা আমরা বেশি রেশি করে বসতে চাই, তাহলে আমাদের গ্যাপগুলি ধরতে পারবো।
বিশেষ অতিথি জনাব ডাঃ অসীম কুমার সমাদ্দার, তত্ত¡বধায়ক, ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল, তিনি উপস্থিত সকলকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। এরপর তিনি বলেন আমার ১ম শ্রেনীর কর্মকর্তা পোষ্ট ৫৯টি তারমধ্যে ৩২টি খালি, ২৫০ বেড হাসপাতাল চালাতে গেলে নার্স লাগে ২৫০ জন কিন্তু নার্স আছে ৬৯ জন। ৩য় শ্রেনীর ২০জন কর্মী গত ৮/৯ তারিখ নিয়োগ দিয়েছে। পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাত্র ৭ জন, ৪র্থ শ্রেণীর পোষ্ট ৩৪টি এরমধ্যে ১৭ জন আছে। আপনাদের টিকিট কাউন্টার নিয়ে অনেক কথা ছিলো, আমি মনে করি ০১ মাস পরে ৭/৮টি টিকিট কাউন্টার হবে। আমরা চেষ্টা করছি প্যাথোলিটি টেকনোলিজস্ট নিয়োগ দিয়েছি । আমার ১৩ বেডের আইইউ আছে। আমাদের ডায়ালসিস নাই। বর্তমানে ডেঙ্গু বাড়ছে। ডেঙ্গু কমানোর জন্য হাসপাতালের পক্ষ থেকে ফগার মেশিন কিনে হাসপাতালে ব্যবহার করছি। রোগিরা বাথরুমে গিয়ে ন্যাপপিন, অন্যান্য ময়লা ফেলে টয়লেট, বেসিন নষ্ট করে নষ্ট করে। বিদ্যুাৎ এর সমস্যা দুর হবে অচিরেই, এখানে পাওয়ার হাউজ হবে। গত একমাস থেকে আমার ২টি লিফট সচল রেখেছি। পানির সমস্যা একটা বড় সমস্যা। পানির পাম্প একটা নষ্ট। আমার দায়িত্ব পিডাবøুকে অবহিত করা। ঔষধ কোন সমস্যা নেই কিন্তু কিছু রোগি সেজে বিভিন্ন সময় ঔষধ নিয়ে যাচ্ছে। আর রোগিরা একাধিকবার ঔষধ নিচ্ছে। যেসকল সমস্যা উঠে এসেছে সেগুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধানের প্রত্যাশা জানান।
প্রধান অতিথি জনাব মোহাঃ খালিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক, বাগেরহাট, তিনি উপস্থিত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আমরা যারা স্বাস্থ্যসেবা দিই আর যারা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করি দুই পক্ষের মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া খুবই জরুরী। সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যতটুকু সামর্থ আছে, আমরা তার সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করবো। সচেতন বৃদ্ধি পেলে এবং আমরা একে অপরকে সহযোগিতা করলে সেবার মান বাড়বে। অনেক সমস্যা আছে আমরা চেষ্টা করলে সমাধান করতে পারি আবার কিছু সমস্যা আছে আমাদের সমাধান করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যসেবায় টেকসই উন্নয়নে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করতে জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম ভূমিকা রাখবে। কিছু সমস্যার কথা শুনেছি যেগুলি সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
এর পর জেলা স্বাস্থ্য অধিকার ফোরামের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমস্যা সম্বলিত স্মারকপত্র তত্ত¡াবধায়কের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
সমস্যা ও সিদ্ধান্ত সমূহ:
- হাসপাতালে শূন্য পদ পুরণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা
- হাসপাতালে অনেক মেশিন নষ্ট এবং জরুরিভিত্তিতে নষ্ট মেশিন, যন্ত্রপাতি মেরামতের ইদ্যোগ গ্রহণ করা
- টিকিট কাউন্টারে সময় র্দীঘসূত্রিতা কমানোর জন্য অতিরিক্ত কাইন্টার বিশেষ করে প্রতিবন্ধী, নারীদের জন্য আলাদা কাইন্টার নিশ্চিত করা
- ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, মশারির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
- হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিকার ফোরাম কে সাথে নিয়ে একটি ২ থেকে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি ফোরাম গঠন করতে পারেন, যাদের কাছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা সেবাগ্রহিতা তাদের সমস্যার কথা নির্দ্বিতায় বলতে পারে। নিয়মিত অংশীজন সভা আয়োজন করা
- লিফট সেবা নিয়মিত চালু রাখা
- হাসপাতালে র্যাম না থাকার কারণে অনেক সময় রোগি কাধে করে ৫তলা/৬তলা বহন করা খুবই কষ্টকর। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা
- সিটিস্ক্যান এর জন্য মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সংসদ সদস্যর সাথে আলোচনা করা
- পানি, টয়লেট, বেসিনের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা
- ওয়ার্ডে চুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা
- টিকিট কাউন্টারে গর্ভবর্তী মহিলাদের অপেক্ষার সময় কমিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা
- আরএমও এর অনুপস্থিতিতে রক্ত পরীক্ষা যেন বিঘিœত না হয় তা নিশ্চিত করা
- হাসপাতালে আসার মেইন রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা
- ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ভিজিট নির্ধারিত সময়ে নিশ্চিত করা এবং রোগিদের পিসক্রিশনের ছবি না তোলার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা
- অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার নিশ্চিত করা।
Citizen's Voice